সোমবার, নভেম্বর ০৮, ২০১০
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ০৪, ২০১০
রবিবার, অক্টোবর ৩১, ২০১০
শনিবার, অক্টোবর ৩০, ২০১০
বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৮, ২০১০
ভ্রমণের চোখজোড়া ব্যস্ত
কর্দমাক্ত ও ঘোলাটে
যেন সবকিছুই নতুন অথবা
হুবহু অতীতেরই মতো
এই বিভ্রম, পরিক্রমা
ধামাচাপা চেষ্টা হৃদয় আবেগ
হীনম্মন্যতা ও ব্যক্তি-বোধকে ঘিরে
এইসব অবয়ব: স্থির-চিত্র, বধিরের
২.
স্থান বিষয়ে, বিষয় সংশ্লিষ্টতায় বলার ইচ্ছা যখন আসে তখন এই বিষয়ের প্রেক্ষিতে বর্ণনাসম্ভব সেলফ জেগে ওঠে বা তাকে করা যায় না বিশ্লিষ্ট আর, বিষয় প্রেক্ষিত থেকে সে বারবার সরে আসে ব্যক্তি দ্বন্দ্বে, বক্তিকেন্দ্রিকতায়, সাবজেক্টিভ সেইসব প্রয়াণ, বিষয়ের লেপ্টালেপ্টি এইসব হৃদয়দৌবল্য, স্থানের; আর স্থান যা হয়ে ওঠে মার্জিনাল, প্রান্তিকতা সবসময়, উৎস খুঁজে বেড়ায়, খুঁজে বেড়ায় ব্যক্তি আকার, সংশ্লিষ্টতার
স্থানের পরিপার্শ্ব ঘিরেই ঘুরপাক খায় সময়। আর সময়ের ডানা ধরেই আটকে থাকতে চায় স্থান। স্থান ঘুরে সময় থেকে সময়ে। সময়ের গোলকের ভিতর এক একটা স্থান। স্থানের নির্দিষ্ট রূপ কোন কি নাই? অ-পার স্মৃতিচিহ্নে, মনে পড়ায়, আটকে থাকায়, ভুলে যাওয়ায়? একইসাথে অশূন্য এবং নিরাকার স্থানচিহ্নের বন্দর ছড়াইতে থাকলো… সময় কী একাকার? একটা সরলরেখা? পাঁকচক্র? সেইটারও প্রচেষ্টা থাকে দৃশ্যকল্পে, কিংবা চোখ ধার করে আর দেখতেই থাকে, পুনরাবৃত্তি করে, যে একটা হয়ে ওঠা অসম্পূর্ণ হয়া আছে ও ছিল, তার অর্ধবৃত্তাকার, মিল ও অমিল
যে আছে, যে নাই, যে আসলে অনির্দিষ্টতা, যে বোধ সঞ্চার করে, দৃশ্যকল্প থেকে লোপাট করে কাঠামো, প্রবিষ্ট করে চেতনা, বেহুলার বাসরে সাপ, চিকন কালা, ভ্রম, সত্যনিবিষ্ট, দৃষ্টিগ্রাহ্যতা, অধঃপতিত বিহ্বলতার আকার, কল্পনা অভীপ্সার, হতোদম্য, আটকে থাকা . . .
তারে উদ্ধারে নেমেছে ডুবরীর সাঁতার। যতিচিহ্নের খেলা। আখ্যানমালার স্ফীতি, বর্ণনারূপ, ন্যারেটিভ এর ভিতর
সোমবার, অক্টোবর ২৫, ২০১০
চিরকাল দূরে থেকে-থেকে তুমি সুদূরের প্রণয়ভাগী হয়ে গেছো
চিত্রার্পিতা, বিলবোর্ড-নিবাসিনী, তোমার গমনোদ্যত পা
মুড়িয়ে দেয়ার জন্য আমি জমাচ্ছি আমার সকল অপরিণামদর্শিতা
সর্বব্যাপী প্রেমোক্র্যাসির ধোঁয়ায় তোমার যতোটুকু শ্বাসকষ্ট
আমি তার ততোধিক নীল নেবুলাইজার
তুমি আসছো মোরগের বিষ্ঠাভরা জংলা পার হয়ে
মিডিয়াগাছের ছায়াফাঁদ বাঁচিয়ে
আমার ডাকবাক্সের ধূলায়, আমার নিখিল বিজ্ঞাপনহীনতায়!
আমি তো তোমার অপলকময়তা দেখে-দেখে
কাঁথামুড়ি দিয়ে পাশ ফিরতাম
নয়তো তোমার গল্পঘরের বারান্দায় বসে দেখতাম
নৈশকোচগুলো গ্যারেজে ফিরছে একে-একে
ঠাণ্ডা চা আর পোঁতানো পপকর্ন গিলছে টহল পুলিশ—
একটা সিএনজি স্কুটার আরেকটাকে পেছনে-বেঁধে
চলে যাচ্ছে দূরে, কোনো সমকামী অভীপ্সার দিকে
এতসব দেখে-দেখে, তোমার নম্র উপেক্ষার ধ্যানে এ জীবন কাটিয়ে দিতাম
ফুটপাতে, শেষরাত্রির প্রিজনভ্যানে!
তোমার চুলে নিরুত্তাপ স্মরণসভার গন্ধ, যেন তুমি
কখনো মানুষ ছিলে, এখন কুঠুরি, দরজা-জানালা বন্ধ
কলতাবাজার কবরস্থান থেকে পালিয়ে আসা লম্বা-লম্বা সিপাহীদের ছায়া
তোমাকে পাহারা দেয়
তোমার বামচোখের ভেতর একটি ঘুরানো সিঁড়ি
উপরে উঠতে-উঠতে হারিয়ে গিয়েছে মহাশূন্যে
তোমার ডানচোখে অতীতকালের একটি চিৎকার জমে বরফ হয়ে আছে
আমি সেই রাত্রেই কসাইটুলি থেকে কুড়াল চুরি করে আনলাম
দেহপসারিনীদের ছেঁড়াখোঁড়া অভিলাষকে চিরদিনের মত বিদায় জানালাম
তখনো অনেক বাকি ভোর, মফস্বলগামী নিউজপেপার
স্তূপাকার হয়ে আছে জনশূন্য বাস টার্মিনালে
এদের ভাঁজে-ভাঁজে আমি বিছিয়ে দিলাম আমার না-লেখা প্রেমপত্রগুলোকে
ছোট আর একান্নবর্তী শহরগুলোর আলোবাতাসে ওরা
বড় হয়ে উঠবে একদিন!
এসে দেখি, তোমার গল্প থেকে এমন মোহময় সাবানের গন্ধ ছড়াচ্ছে
আর তা তন্ময় হয়ে গিলছে কয়েকটি নির্ঘুম কাক
তুমি কি ওদের সাথেই উড়বে নাকি, বিলবোর্ডবাসিনী!
ওরা কিন্তু সত্যি-সত্যি কাক নয়—কর্পোরেট মেটাফিজিক্স—
তোমাকে তোমারই স্মৃতির ভেতর কয়েদ করতে এসেছে, তারপর
বাসি মেট্রোপলিটনের পিঁপড়াগুলোকে ছেড়ে দেবে ওরা
তোমার সবুজ শাকসবজির আকাঙ্ক্ষার ভেতর
তবু, কোনোদিন ভোরবেলা জেগে আমি অবাক দেখবো শাদা বিলবোর্ড
অচেনা রূপসী, নতুন কমোডিটি—তোমার শ্রান্ত ডানাজোড়া আর
খুঁজেও পাবো না
যাদের আমি চোখের জলে এতকাল লুকিয়ে রেখেছিলাম!
শনিবার, অক্টোবর ২৩, ২০১০
শনিবার, অক্টোবর ১৬, ২০১০
বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৪, ২০১০
সোমবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১০
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে - আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? - তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস -
আকাশের ওপারে আকাশ।
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১০
Eid Mubarak
সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১০
বাজাচ্ছিলাম বাঁশি যখন সুখের সুরে,
বাজাচ্ছিলাম বাঁশি যখন উপত্যকায়,
একটা মেঘে দেখতে পেলাম এক শিশুরে,
মোহন হাসি হেসে শিশু বলল আমায়:
“মেষশিশুকে নিয়ে গান-এক শুনিয়ে দাও!”
সুখের সুরে বাঁশিতে গান উঠল বেজে।
“বাঁশিওয়ালা, গানটি তুমি আবার বাজাও!”
তাই বাজালাম, কিন্তু শুনে কাঁদল সে যে!
“দাও, ফেলে দাও আনন্দিত বাঁশি তোমার,
গানখানি গাও গলা ছেড়ে, সুখের সুরে!”
গাইলাম তাই ঐ গানটাই ফের একবার,
সুখের সুরে ফের কাঁদালাম ঐ শিশুরে।
“বাঁশিওয়ালা, ব’সো এবার, লেখো এ-গান
পুথির পাতায়, সবাই যেন পড়তে পারে।”
বলতে-বলতে করল শিশু অন্তর্ধান–
হানা দিলাম খাগড়া-বনে, নদীর পাড়ে,
খাগড়া দিয়ে বানাই একটা গ্রাম্য কলম,
স্বচ্ছ জলে আলতা গুলে বানাই কালি;
গান লিখে যাই, আনন্দিত, আর মনোরম,
শুনে সকল শিশু বাজায় করতালি।
নিষ্প্রয়োজনে
আমি
ছোট নাম লেখাতে গেছি
কবির খাতায়
নিজ প্রয়োজনে
আমি
নক্ষত্রের দেনা
নিয়েছি মাথায়
বিষ-প্রয়োজনে
আমি
সাপ ও বেদেনী
চেয়েছি দুটোয়
দুহাতে দুধের ছানা, বেপরোয়া মুঠোয় মুঠোয়
সম্পূর্ণ ফুটেও নারী, ক্লাসিক্যালি অস্ফূট…
So, আজ আমাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো–
আমি কি কবি ছিলাম? সাপুড়ে ছিলাম? নাকি ছিলাম যা, তাই?
শিস্ প্রয়োজনে
আমি
হাওয়া ধাক্কা দিচ্ছি
বসন্ত-জঙ্গলে গাছদেবতার
শুকনো পাতায়
কে আমি? বিখ্যাত কেউ? কী ছিলাম? গুরু কেউ? লঘু ঢেউ?
ঝরনার বাথরুমে শাওয়ার ছিলাম?
সুহাসিনীর ড্রেসিং টেবিলে আয়না ছিলাম?
গুপ্তকথা হচ্ছে, আদতে সেই রাক্ষসদের ছেলে, মানুষের ছদ্মবেশে থাকি
যোগ্যতা, নিজের মুখে জোসনারাত অনুবাদ করতে পারি, এর বাইরে
আমি যা ছিলাম, তাই…
ছিলাম যা, তাই…
যদি… মাত্র… তবে
হবে কি হবে না হবে?
নদী মাত্রই জল
উতলা ধরণী তল…
নারী মাত্রই, ঠারে-
ভাব, আকারে-বাকারে
ইথারে চিরকালের কথা
ঘুরিছে নিয়মমাফিক, প্রথা
প্রেম?
প্রথার মধ্যেই পড়ে
ধাক্কা তুমুল ঝড়ের…
ঝড় মাত্রই থামে
আকাশ দূরে নামে–
মাঠকে আড়াআড়ি
তরুণ কবির বাড়ি… (তার)
ফেরার টাইম কই?
ছাপা হচ্ছে বই…
ছাপা হচ্ছে জ্বালা
অগ্নি-কর্মশালা
ছাপা হচ্ছে দুঃখ
(আত্মপ্রকাশ মুখ্য)
ছাপা হচ্ছে দ্রোহ
অনন্ত নীল গ্রহ
নীল গ্রহেই থাকে
তরুণ কবি যাকে
নিজের ছবি আঁকে
যার ভেতরে আঁকে
তার ভেতরে আঁকে
শরীর মনের বাঁকে
শরীর হয়েই থাকে
মন যে শরীর আঁকে…
আঁকা লেখার ছবি
খা খা একার ছবি
দগ্ধ দেখার ছবি
মুগ্ধ থাকার ছবি
দুক্কুরেও ভৈরবি… (হায়)
তিন রাস্তার মোড়ে
ঘুর্ণি হাওয়া ওড়ে
নেশাও আসে নেশার
মহাজাগতিক পেশা–
দাঁড়িয়ে থাকে দাহে
রুক্ষ তরুণ কবি
বৃক্ষ তরুণ কবি
সূর্য তরুণ কবি
দগ্ধ তরুণ কবি
কী চায় তরুণ কবি?
আমার ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখাটা শুরু হয়েছিল কবে ঠিক মনে করতে না পারলেও ছোটবেলার সেই ‘আলাদিনের দৈত্যের’ স্বপ্নগুলো এখনও আবছা আবছাভাবে চোখে ভাসে।কার্টুন ছবিতে দেখতে দেখতে ‘দৈত্যের’ চেহারা মনের ভিতর এতটাই গেথে গিয়েছিল যে কখনো কখনো সে ঘুমের মধ্যেও চলে আসত।কি যে সব বায়না ধরতাম তার একফোঁটাও মনে নেই,হতে পারে সেটা চকলেট অথবা বউ পুতুলের জন্য রঙীন শাড়ি.................................এর বেশি আর কি।।তবে সেই সময়কার হাজারো বায়নার কথা মনে না থাকলেও একরাতে দৈত্যের কাছে কোনএক ইচ্ছাপূরণের দাবী জানাতে গিয়ে খাট থেকে যে পড়ে গিয়েছিলাম তা কিন্তু বেশ মনে আছে..!
সেসময় বিটিভিতে একটা কার্টুন খুব জনপ্রিয় ছিল ‘মিনা’।এখনও হয়তো দেখায়।বাংলায় ডাবিং করা কার্টুনটার প্রতি যতটা না আকর্ষণ ছিল তার বেশি আকর্ষণ ছিল কার্টুন শেষের গানটার প্রতি।লাইন গুলো খুব সম্ভব এমনই ছিলো...........“আমি বাবামায়ের শত আদরের মেয়ে/আমি বড় হই সকলের ভালবাসা নিয়ে/আমারও তো সাধ আছে,আছে অভিলাষা.........আমি পড়ালেখা শিখতে চাই”........গানটা গুনগুনাতে গুনগুনাতে কতরকমের স্বপ্নে বিভোর হতাম তার কোন ঠিকঠিকানা নেই।পড়ার টেবিলে থাকত খোলা বই,বইয়ের পাতায় কবি নজরুলের ‘সংকল্প’,মনের ভিতর বাবামায়ের আদর্শ মেয়ে হওয়ার বাসনা আর দুচোখ জুড়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন............কখনো পাইলট হয়ে মেঘের দেশে,কখনো ডুবুরি হয়ে মুক্তোর সন্ধানে,কখনো বা মাউন্টেইনার হয়ে হিমালয়ের চুড়ায়...................মধুর সেই ছেলেবেলা।।
রূপকথার বই খুব পড়া হত একটা সময়; তবে বই পড়া শুরু করার আগেই শেষের পাতায় চলে যেতাম।দেখতাম-“অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল”-এই লাইনটা আছে কিনা।।রাক্ষস,খোক্ষসের সাথে যত যুদ্ধই হোক না কেন গল্পের শেষে রাজপুত্রের জয় এবং রাজপুত্র-রাজকন্যার বিয়ে যেন অবধারিত ছিল।এতসব গল্পের মধ্যে একটা গল্প প্রায় সময় উড়ে এসে জুড়ে বসত মনের আঙ্গিনায়। .....................“রাজপুত্র অজানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেতে যেতে.........যেতে এক দিঘীর সামনে এসে দাড়াতো আর হটাৎ করে দিঘীর পানি সরে গিয়ে মস্ত এক সিড়ি বের হয়,যে সিড়ি গিয়ে শেষ হয় দিঘীর অনেক গভীরে।যেখানে রাজপুত্র খুজে পায় দীঘলকেশী ঘুমন্ত রাজকন্যাকে”।ছোটবেলা থেকেই যে বাসায় বড় হয়েছি তার সামনে বড় একটা পুকুর ছিল।পুকুরটার দু’পাড়ে ছিল বড় বড় দুটো সিড়ি; আমি আর মিসবা আমরা দু’ভাইবোন সেই পুকুরে গোসল করতাম বিল্ডিং এর অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে। ছেলেরা সব যার যার বাসা থেকে তেলের কন্টেইনার নিয়ে এসে তাতে চেপে পুকুরে নামত আর সাতার শিখত। আমি হয়ত কখনো সিড়িতে দাড়িয়েই এক কোমর পানিতে নাক চিপে দুই/তিন ডুব দিয়ে উঠে আসতাম। তবে বেশিরভাগ সময় কাটতো পাড়ে বসে খেলার সাথীদের গোসল দেখতে দেখতে।...........পুকুরের নীলচে সবুজ পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই কখনো মনে হত............“মনে হত যেন পানিগুলো সব ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে,মস্ত সিড়ির ধাপগুলো জীবন্ত হয়ে চলে যাচ্ছে গভীর থেকে গভীরে,আর আমি যেন সিড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছি কোন এক অচিনপুরে”............।স্বপ্ন ভাঙতো পুকুরের পানিতে নাকানিচুবানি খেয়ে।পাড়ে চুপচাপ বসে থাকা স্বপ্নালু এই আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সিড়ির পাশে একগলা পানিতে ফেলে দেয়ার কাজটা মিসবার জন্য নিত্যনৈমত্তিক হয়ে দাড়িয়েছিল।কিন্তু কেন জানি এত পানি খাওয়ার পরও সাতার জিনিষটা শেখা হলনা।।তারপরও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি পুকুরের স্বাদ তো পেয়েছি অন্তত।এসময়কার বাচ্চারা পুকুর তো দূরে থাক,খেলার জন্য একটুকরো সবুজের সন্ধানই পায়না। এছাড়া রূপকথা,টোনাটুনির গল্প,টুনি নাককাটা রাজা এবং সাতরানির গল্প,চাচা চৌধুরী আর সাবু এসব মজাদার বই কয়টা বাচ্চা এখনো পড়ে কে জানে।।
শৈশব যায়,কৈশোর যায় স্বপ্ন দেখা ফুরায় না।টিনএজের সেই উথালপাথাল স্বপ্নগুলো,এই ঘুণে ধরা সমাজটাকে একটা তুমুল আন্দোলনের মাধ্যমে বদলে ফেলার ইচ্ছাগুলো...............মনে হতো আমরা চাইলেই যেন স্বপ্নগুলো সব সত্যি হয়ে যাবে-“গরীব আর গরীব থাকবেনা,মধ্যবিত্তের সন্তানদের সাধ আর সাধ্যের মধ্যকার দ্বন্ধ নিয়ে আর ভাবতে হবেনা,পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়বেনা যুদ্ধে আহত কোন শিশুর নির্বাক চাহনি”.........এখন জানি,বুঝি এইসব স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন হয়তো একপ্রকার অসম্ভবই তারপরও কেন জানি মনের গভীরে কোথাও এক কোণে এই অসম্ভবগুলোকেই লালন করতে বড় ইচ্ছা করে।
এই পরিণত বয়সে এসে স্বপ্ন দেখতে অনেক ভয় লাগে। না,স্বপ্ন দেখাটা ভুলে যাইনি কিন্তু স্বপ্ন দেখতে গেলে যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথের কঠিন বাধাগুলোও চোখে ভেসে উঠে। তারপরও,এতসব জটিল হিসাব নিকাশের পরও মানুষ স্বপ্ন দেখে,স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে,স্বপ্ন নিয়ে বাচঁতে ভালবাসে............পৃথিবীর প্রতিটা বাবামা স্বপ্ন দেখে তার ছেলেমেয়ে বড় হবে,নাম কুড়াবে............তরতাজা যুবকটা স্বপ্ন দেখে অনেক ভালো একটা চাকরীর,তার বন্ধুদের ট্রিট দিতে হবে না..! ............তরুণীরা সবাই এমনকি সবচেয়ে অসুন্দর,কালো মেয়েটাও স্বপ্ন দেখে একটা সাজানো সংসারের,যেখানে থাকবে তার জন্য অফুরন্ত ভালবাসা...............দূরদূরান্তে ছড়িয়ে থাকা বন্ধুরা সবাই স্বপ্ন দেখে একদিন তারা আবার একসাথে হবে,একদিন তারা সূর্যটা ছোঁবে..............................
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ভুলে যাই সবকিছু,ভুলে যাই জীবনের যত মারপ্যাঁচ,ভুলে যাই আমি কারো মেয়ে,কারো বোন, কারো স্ত্রী,কারো মা............শুধুই ইচ্ছে করে শৈশব কৈশোরের সেই আমিত্বকে ফিরে পেতে,ইচ্ছে করে সমুদ্রের মাঝের কোন নির্জন দ্বীপে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি তিন গোয়েন্দার জিনার মত,ইচ্ছে করে গলা ছেড়ে গাই,...............“ছেড়া পালে লাগুক হাওয়া/ছুটে চলুক জীবন মাতোয়ারা/জীবনটা যেন এক স্রোতস্রিণী/বয়ে চলুক অবাধ নিরবধি/কি লাভ লেনাদেনা হিসাব কষে/পাওয়া না পাওয়ার অংক কষে/চুপিচুপি সময় যে পালায়/কেন বসে কিসের আশায়/জীবনের এই সব নীল আয়োজন/পৃথিবীর এই রঙ্গশালায়/উড়ে যাক সব দমকা হাওয়ায়/জীবন চলুক হাসি,গান,কথায়”........................
স্বপ্নের কি আর শেষ থাকে..!! স্বপ্ন নিয়েই তো মানুষের বেঁচে থাকা…….!!!
তবে দেয়ার কিছু নেই
যদি কিছু না চাও
তাহলে দেয়ার আছে অনেক
একটা সবুজ ভূমি জুড়ে ছড়ানো শশ্য ক্ষেত
অথবা আকাশের রঙ গায় মাখা একটা চপলা নদী
যদি কিছু দাও
তবে নেবোনা কিছুই
যদি না দাও
তবে নিতে চাই অনেকের চেয়েও বেশী
আমাজনের মতো বিশাল কোনো বন একটা হৃদয়ে
যেখানে আবাস আমার সকল স্বপ্নের আর আগামীর
যদি কিছু পাও
তবে আরো খুঁজে যাও
যদি না পাও
কি লাভ খুঁজে... ঢের রয়ে যাক বাকী
খুঁজবে না তুমি কাউরে কোথাও কোনোদিন বুঝি আর
তবু পৃথিবী খুঁজবে তোমাকে, তুমি নাই, নাই তুমি।